রূপকথা

সমাজ টা আরো সুন্দর হত , যদি ভোগ করার কথা কম ভেবে , মানুষ বেশী উপভোগ করতো. সমাজ টা আরো সুন্দর হত​ , যদি ইর্সা থাকতো , বদনাম নয়. রাগ থাকতো , অপমান নয়. পেশা থাকতো , পেশাগত গালাগালি নয়. হয়তো সমাজ টা আরো সুন্দর হত​ , যদি মনুষ্যত্ব থাকতো , অ মানুষ ন​য়.

এক পলকে

সকাল থেকে বিছানার উপর ল্যাপটপ এ মুখ গুঁজে বসে আছি  অভিমান করে, হয়তো রাগও করেছি . আর এসব যাকে ঘিরে সে দিব্বি গুনগুন করতে করতে ছাদে শুকোতে দেওয়া জামাকাপড় গুলো নিয়ে ঘরে ঢুকলো ; শ্রেয়া, আমার স্ত্রী - আমার এই পাঁচ বছরের বিবাহিত জীবনের এক মাত্র রংমশাল . প্রেমে পড়েছিলাম বলতে পারি , ভালোবেসেছিলাম কি বাসিনি তা ভাবতে ভাবতেই বিয়ে টা করে ফেলেছিলাম. পাকা দেখার দিন শ্রেয়া আমায় বলেছিলো "শোন প্রদীপ , বিয়ের আগে এর চেয়ে বেশি বুঝে কাজ নেই, বিয়ের পর সারা জীবন পরে আছে বোঝার জন্য ." . "বিছানা ছেড়ে একটু উঠিস, চাদর টা পাল্টাবো " - শ্রেয়া ওর গুন্জন একটু থামিয়ে আমার দিকে না তাকিয়েই টেবিল এর উপর আমার ছড়িয়ে রাখা বই গুলো গোছাতে গোছাতে বললো . যদিও এই গোছানোর কাজ টা আমিই করি , কিন্তু মেজাজ বিগড়ে থাকায় আজ আর তাতে আগ্রহ দেখাইনি. আর মেজাজেরও  বা  কি দোষ, দিনে তিন বার দু চামচ চিনির সাথে চা না হলে যার হয় না , সেই মানুষ টি নাকি  আজ সকাল থেকে এক বারো চা পেলো না . আর তার কারণ হোলো গত সন্ধে বেলা আমার চা এর চিনি কম হওয়া নিয়ে ওর সাথে হওয়া একটু কথা কাটাকাটি . শেশমেশ আমি বলেছিলাম "বেশ তোকে আর চা করে দেওয়ার দরকার নেই " , তাই আজ এখনো চা জুটলো না কপালে . জব্দ করলো বোধ হয় , কারণ ওর হাতে সকালের চা টুকু না পেলে আমার কত টা অস্থির লাগে , তা ওর থেকে ভালো আর কে জানে . যদিও এই অস্থিরতার কথা মুখে প্রকাশ করিনি কখনো , করতে হয়ওনি কখনো . ওর সাথে এই মনমালিন্যের সূচনাটা কয়েক দিন আগে . নৈশভোজে বোসে ও হঠাৎ বলেছিল " তুই আর আগের মতো আমায় ভালোবাসিস না , আগের মতো  রসিকতা করেও বলিস না যে, ভালোবাসি ." . আমার মনে আছে , বিয়ের আগে ওর সাথে চা এর দোকানে বোসে মাটির ভাঁড়ে চুমুক দিতে দিতে রসিকতা করেই  বলতাম " জানিস শ্রেয়া , আমি না তোকে একটু একটু ভালোবাসি. " আর ও আমার অতি প্রিয় গায়ক কিশোর কুমার এর গান এর কথা তুলে বলতো " আরো একটু বেশি হলে ক্ষতি কি ?" . কিন্তু বিয়ের মাত্র পাঁচ বছর পর আর বলা হয় না , হয়তো আমি কম রোমান্টিক হয়ে গেছি, দায়িত্ব , কর্তব্য আর অফিসের কাজ এর ভারে . কিন্তু সেটাও তো ওরই জন্য , ওকে সব টুকু সুখ দেওয়ার , যত টা আমার সাধ্যে আছে তার এক তীব্র প্রচেষ্টায় . ঘর টা গুছিয়ে বিছানার চাদর পাল্টে শ্রেয়া আধা ঘন্টা হোলো দোতলা থেকে নিচে নেমে গেছে  ওর সিঁড়ির এক দু ধাপ টপকে ওঠা নামার অভ্যাস টিকে পালন করেই . প্রতিবার বারন করি ,আর ও বলে , " ভুল হয়ে গেছে , sorry . " আর আমি বলি, " যে ভুল বার বার হয় , তাকে বদভ্যাস বলে , সময় থাকতে পাল্টে ফেলা উচিত ." , কে কার শোনে . একটা mail লেখা শেষ করে send button এ ক্লিক করতে যাবো আর তখনি নিচে থেকে শ্রেয়ার আর্তনাদ মতো কিছু শুনে ছুটে গেলাম সিঁড়ির দিকে , দেখি শ্রেয়া বোসে আছে সিঁড়ির নিচের ধাপে . ভাবলাম , নির্ঘাত পড়েছে . দিকবিদিক জ্ঞান হারিয়ে কি ঘটেছে সে টুকু জানার প্রয়জন বোধ টুকু না করেই ঘরে গিয়ে দৌড়ে ব্যথা কমানোর spray টা নিয়ে ওর কাছে গেলাম . চিন্তায় দুশ্চিন্তায় বেশ বকা দিয়েই  বললাম , " পড়েছিস তো সেই , কত বার বারন করেছি বল তো ? শুনিস না কেন ? " , শ্রেয়া ঘাড় নেড়ে কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলো - " আরে ..." , আমি ওকে চুপ করিয়ে বললাম " সব কথা শুনবো , আগে বল কোথায় লেগেছে ?" .   ঠোঁটের গোড়ায় হালকা হাসি নিয়ে আমার দিকে আদুরে ভাবে তাকিয়ে , যেন কোন ছেলেমানুষি ধরা পড়েছে আমার মধ্যে .আমার এবার ভারি রাগ হলো , ভুরু কুঁচকে বিরক্ত হয়ে শুধোলাম " কিরে বলবি তো ?" . ও বললো , " আরশোলা "  . বেশিরভাগ নারী দের মতোই আমার বৌ টিও এই কীট টিকে ভীষণ ভয় পায়, তা আমার অজানা নয় . আমি কিছু টা শান্ত হয়ে সিঁড়ির ধাপ এ ওর পাশে বোসে জিগেশ করলাম  " পড়িস নি তালে ? " . জবাবে একটু ধমকের সুরে বললো " কেন ? পড়লে বুঝি ভালো হোতো ? " . এর পর কিঞ্চিৎ ক্ষণ একে অপরের দিকে তাকিয়ে থেকে হেসে ফেললাম উভয়ই , আমার ছেলেমানুষির কথা ভেবেই . ঠোঁটের ওই হাসি টা ম্লান না হতে দিয়েই বললাম " জানিস শ্রেয়া , আমি না তোকে বড্ডো ভালোবাসি. " আর ও ওর প্রেম ভরা দু চোখ নিয়ে কিছু মুহূর্ত আমার চোখের দিকে তাকিয়ে সেই গানের কথা তুলেই  বললো  " আরো একটু বেশি হলে ক্ষতি কি ?" .

Comments

Popular posts from this blog

রূপকথা

ঝালমুড়ি