দশ পনের মিনিটের
বেশী হয়ে গেছে cafe টিতে এসেছি , আর সুশ্রীর সাথে
এখনো অবধি তেমন বিশেষ কিছু কথা হয়নি .দুজনেই কফির কাপে নীরবে চুমুক দিয়ে চলেছি সাত
পাঁচ ভাবতে ভাবতে .এই জায়গা টিতে সুশ্রী আগেও এসেছে কয়েকবার,ওর দিদি আর আমার সাথে . তফাৎ এই যে ,এবারটায় ওর দিদি
অর্থাৎ শুভশ্রী নেই . শুভশ্রী -আমার জীবনের হাজারটি ব্যর্থতার মাঝে একটি সফলতা, আর একটি অসম্পূর্ণ অধ্যায় . সম্পর্কটি ভেঙে গেছে আজ কয়েক মাস হলেও সুশ্রী মাঝে
মধ্যে আমায় ওর দিদির সব কথা জানায় . ধ্বংস হয়ে যাওয়া নক্ষত্রের বিকিরিত রশ্মির মতো
এই সম্পর্কটিও কোনো না কোনো ভাবে মরেও বেঁচে রয়েছে . কিন্তু এই ফলের প্রত্যাশা তো
ছিল না আমার . শৈশবের পছন্দের মেয়েটিকে যখন যৌবন কালে নিজের করে পেলাম , স্বপ্নপূরণ হওয়ার মতো লেগেছিলো , এক পরশপাথরের
ছোয়ায় উদ্দেশ্যহীন এই এলোমেলো জীবনটার বাকি পথ টা যেন আলোকময় হয়ে উঠেছিল . বুঝিনি তখন, যে এক কালবৈশাখী ঝড়ে সবটা তোলপাড় করে রেখে দেবে
. হয়তো কালো মেঘ আকাশে আগে থেকেই জমাট বাঁধছিলো , শুধু আমিই তা দেখিনি , হয়তো দেখতে চাইনি
. "যেটা দেবে বলেছিলে, কোথায় ? " - কফির কাপে একটি
ছোট্ট চুমুক দিয়ে কাপটি টেবিলে প্লেটের উপর রেখে প্রশ্নটি করলাম সুশ্রীকে. আজ
সকালে ও call করে দেখা করার কথা বলেছিলো , শুভশ্রীর দেওয়া একটি চিঠি আমায় দেবে বলে . "দেব তো , তাড়া আছে নাকি তোমার ?"
- মুচকি হেসে সুশ্রী বলল.
আলতো হেসে ঘাড় নেড়ে জবাব দিলাম - "না, তা নেই ".
"বেশ . জানো গত সপ্তাহে দিদির বিবাহবিচ্ছেদ টা পাকাপাকি ভাবে হয়ে গেলো "
- একটু হতাশ হয়েই কথাটি বলল সুশ্রী . আমি যদিও কোনো জবাব দিলাম না , কথাটির প্রতি কোনো আগ্রহ প্রকাশও করলাম না . কিন্তু মনের ভিতর কোথাও একটা আঘাত
করল কথাটি . একসময় যেমন চাইনি যে ও আমাকে ছেড়ে অন্য কারুর হোক, তেমন ওর বিবাহিত জীবনের ইতি ঘটুক এমন কামনাও করিনি. আমার সাথে সম্পর্কটির কথা
জানাজানি হতে শুভশ্রীর বড়োলোক পরিবার তাদের status বজায় রাখতে হঠাৎ
তার বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয়
এক বিলেত ফেরৎ ইঞ্জিনিয়ারের সহিত . বিবাহটি আটকানোর চেষ্টা টুকু করলেও আমার
মতো বেকার বসে থাকা একটি ছেলের সাধ্যে ছিল না পরিণতি কে বদলানো .নিজের হার স্বীকার
করে ভেবেছিলাম অন্তত ও সুখী থাকবে ;
যে সুখ কেনার ক্ষমতা আমার
নেয় , তা ও সবটা পাবে . কিন্তু সে সুখ টুকুও তো টিকল
না ওর ভাগ্যে . "এই যে প্রদীপ দা তোমার সম্পত্তি . আজ তবে আমি আসি" -
চিঠিটা টেবিলের উপর রেখে আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে সুশ্রী কথাখানি বলে চলে গেল. আমি
দ্বিধাগ্রস্থ উত্তেজিত মন নিয়ে তাকিয়ে চিঠি টির দিকে . কি এমন লিখে থাকতে পারে ও, সে বিষয়ে ভাবতে ভাবতেই চিঠিটা পড়া শুরু করলাম . তাতে লেখা - "যখন আমার
জীবনের চলার পথ টি আঁধারে ঢেকেছিলো ,অজানা বিপদ যখন
অপেক্ষায় ছিল সেই পথে , তুই এসেছিলি আমার জীবনে . সম্মুখে থেকে আলোকময়
করে তুলেছিলো পথ টিকে, আমার জীবনের হেডলাইট হয়ে . তাই চাইনি আমার
জীবনের আঁধার, জটিলতা তোকে গ্রাস করুক, আমার এলোমেলো জট পাকানো জীবনের কোন ছায়া তোর উপর এসে পড়ুক. তাই তোর থেকে দূরে
থাকার কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম . কিন্তু একা থাকতেও আমি পারবো না যে ; বড় ভয় করে ,জীবনের কুৎসিত মুহূর্ত গুলো যেন গিলে খেতে আসে
আমায় একা পেলে . বিবাহ জীবন টিও টিকাতে পারলাম না জানিস. একটাই সমস্যা ছিল , পুরুষ টা যে তুই ছিলিস না . শেষমেশ নিজের এই অগোছালো মনটির চিকিৎসার জন্য
ডাক্তারের পরামর্শে এক জায়গায় যাচ্ছি . তোকে একটা অনুরোধ করব প্রদীপ ? নিজের জীবনে কাউকে খুঁজে নে. যার মনের আলোতে তোর জীবনটা সুখের হয়. যে সুখ আমি কেড়ে নিয়েছি হয়তো , বিন্দুমাত্র হলেও . জানিস তো ,
জীবনের এক সময় আসে যখন সে
একা বেঁচে থেকে হাঁপিয়ে ওঠে , ভাগ করে নিতে চায়
নিজের ভার টুকু অন্য আরেক জীবনের সাথে . সময় থাকতে খুঁজে নে তাকে. আর তবুও যদি একা
থাকিস , যদি ক্লান্ত হয়ে উঠিস জীবনের কোন পথের বাঁকে , কথা দিলাম , ফিরবো আমি তোর কাছে , ধরবো তোর হাতখানি . শুধু একটা কথা বল, তখন কি পড়বি আবার
,ঠিক এমন ভাবেই , আমার প্রেমে ?"
Comments
Post a Comment